মাধ্যমিক বাংলা রচনা : কুসংস্কার প্রতিরোধে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা

madhyamik-bangla-eassy-writing-the-role-of-students-in-preventing-superstition

মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ৩০০ থেকে ৪০০ শব্দের মধ্যে একটি প্রবন্ধ রচনা লিখতে হয় যেটি ১০ মার্কের হয়ে থাকে। এবার মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রবন্ধ রচনা আসতে পারে ঠিকই তবে কিছু বিষয় থাকে যেগুলো পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ সেই বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো কুসংস্কার প্রতিরোধে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা। নিম্নে এই বিষয়ের উপর একটি খুবই সুন্দর এবং যথাযথ প্রবন্ধ রচনা দেওয়া হল। মাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধের জন্য বাকি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পরবর্তীতে শেয়ার করা হবে।


ভূমিকা : আজকের সময় বিজ্ঞানের অশ্বমেধের ঘোড়ায় তার মানুষের বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জয়ের কাহিনি। নিরলস সাধনা তার মেধায় মানুষ নিজেই আজ এক মহাজাগতিক বিস্ময়। কিন্তু বিজ্ঞানের এই অগ্রগতি মানবসমাজের হিরণকে সমৃদ্ধ করেছে যতখানি, অন্তরাত্মায় তার হাঁয়া ততটা সর্বাত্মক হয়ে ওঠেনি। ফলে বিজ্ঞানচেতনায় আলোকিত হয়নি মানবমন। অজস্র কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসের ছায়াপথে আলো ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে বিজ্ঞানের প্রবল শক্তি।

কুসংস্কার কী? এবং এর রকমফের : কুসংস্কারের মূলে থাকে বহু যুক্তিহীন ভ্রান্ত ধারণা। এই কুসংস্কার কখনও থাকে একান্ত ব্যক্তিগত পর্যায়ে, কখনও তা। সমষ্টিচেতনাকে আচ্ছন্ন করে। যাত্রাকালে হাঁচিকে বাধা মনে করা, টিকটিকির ডাককে সত্যের ইঙ্গিত ভাবা, বিড়াল রাস্তা পেরোলে অশুভ ভাবা-এগুলো ব্যক্তিগত কুসংস্কার। আবার সতীদাহ, গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জন থেকে মন্দির-দরগায় মানত করা এগুলো গোষ্ঠীগত কুসংস্কারের উদাহরণ। এই ধরনের প্রতিটি কুসংস্কারের পিছনে আছে ধর্ম বা গোষ্ঠীর প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন।

বর্তমান সময় এবং কুসংস্কার : একটা সময়ে বিরুদ্ধ প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করার জন্য মানুষ অন্ধবিশ্বাস আর উদ্যোগ অতিপ্রাকৃত শক্তিকে আঁকড়ে ধরত। কিন্তু বর্তমানে সামাদ্রীর অবস্থার বদল ঘটেছে। বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে স্বাচ্ছন্দ্য জনগরে ও নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি, কিন্তু মানুষ তার পুরোনো অভ্যাসকে পালটাতে পারেনি আজও। তাই ফুটপাথ দখল করে মন্দির ওঠে, টিভি চ্যানেলগুলো পূর্ণ হয়ে থিয়েটারে ঢোকার আগে কপালে হাত ঠেকান স্বনামখ্যাত থ্যাকে গরজি-বাবাজিদের সান্ধ্য বৈঠকে আর অপারেশন নার্জেন। ব্যক্তিগত অন্ধবিশ্বাস শিক্ষিত-অশিক্ষিতের শীমারেখাকে মুছে দেয়-এই একুশ শতকেও। কখনও ভাই আবার গোষ্ঠীচেতনায় রূপান্তরিত হয়ে মৌলবাদের রূপ নেয়, আবার ডাইনি সন্দেহে পিটিয়ে মানুষ হত্যায় তা গণ-হিস্টিরিয়ার চেহারা নেয়, যা দেখে মনে হয়-"অদ্ভুত আঁধার এক পৃথিবীতে এসেছে আজ।”

ছাত্রসমাজের দায়িত্ব : ছাত্রসমাজ দেশের আলোকিত অংশের প্রতিনিধি। সুতরাং, সভ্যতাকে কুসংস্কারের কলুষমুক্ত করার দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে। যে অন্ধ ধর্মবিশ্বাসী ধর্মের আড়ালে কুসংস্কারের নামতা পড়ে ২ তাকে শোনাতে হবে ধর্মের সরল আদর্শ। মানুষকে যুক্তিবাদে দীক্ষা দিতে হবে। বিভিন্ন সেমিনার, প্রদর্শনী, জাঠা ইত্যাদির মাধ্যমে বোঝাতে হবে অন্ধবিশ্বাসের স্বরূপ। বিজ্ঞান-যুক্তিবাদী সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ, গণদর্পণ ইত্যাদি যেসব সংস্থা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এবং বিজ্ঞানচেতনার প্রসারে নিরন্তর কাজ করে চলেছে তাদের - সঙ্গেও যুক্ত হতে হবে। তবে সকলের আগে নিজেকে - বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোনো দ্বিধা নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে জয়লাভ সম্ভব নয়। চ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই আসলে অদৃশ্য শত্রুর সঙ্গে লড়াই। আর প্রকৃত শিক্ষাই এই লড়াইয়ে জয় এনে দিতে পারে। তাই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সঙ্গে এ পরিপূরকভাবে নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে লড়াইও শুরু করতে প্র হবে। মনে রাখা দরকার, শিক্ষার অর্থ শুধু আত্মপ্রতিষ্ঠা ন নয়, তা জন্ম দেয় একজন সচেতন বিবেকসম্পন্ন এ দায়িত্বশীল মানুষের। এই দায়বদ্ধতাই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ছাত্রসমাজের কাছ থেকে প্রত্যাশিত।

উপসংহার : কুসংস্কার প্রগতির পথ রুদ্ধ করে,সমাজকে করে তোলে দিশাহীন। আলোর পথযাত্রী ছাত্রেরা এই আঁধার দূর ক'রে বিজ্ঞানের যথাযথ প্রতিষ্ঠা করুক-এ আকাঙ্ক্ষা সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের। কারণ, ছাত্ররাই পারে তাদের দৃঢ়তায় সকল দুর্বলতার অবসান ঘটাতেー"এ বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ে/এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে।"


Post a Comment

Previous Post Next Post