📙সার্ক(SAARC) গঠন, উদ্দেশ্য, সমস্যা ও সাফল্য📝

wb-class-12-political-science-4th-semester-note-on-saarc

WB Class 12 Political Science 4th Semester  (Major Regional and Sub-regional Organisations)
- এ অর্থাৎ দ্বিতীয় ইউনিটে তোমাদের সার্ক (SAARC) সম্পর্কে পড়তে হবে। আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান ছাত্রছাত্রীদের জন্য সার্কের ওপর একটি সম্পূর্ণ নোট শেয়ার করেছি। যেখানে তোমরা সার্কের গঠনের ইতিহাস ; সার্কের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য সার্কের প্রধান সমস্যা সমূহ এবং সার্কের সাফল্য সম্পর্কে তুলে ধরেছি।

▪ সার্ক গঠনের ইতিহাসঃ-

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং তাদের আঞ্চলিক উন্নতির জন্য; দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে কোনো আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ ১৯৭০ দশকের শেষ দিক পর্যন্ত দেখা যায়নি। কিন্তু এই বিষয়ে সর্বপ্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান

১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ৮ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ অর্থাৎ ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপকে নিয়ে South Asian Association For Regional Co-Operation (SAARC) গঠন করা হয়।

▪ সার্কের সদস্য রাষ্ট্রঃ-

১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের সার্ক যখন গঠন করা হয়েছিল তখন সার্কের সদস্যের রাষ্ট্র সংখ্যা ছিল সাত। অর্থাৎ ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা এবং মালদ্বীপ। তবে ২০০৭ সালে আফগানিস্তান সার্কের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে যুক্ত হওয়ায় বর্তমানে সার্কের সদস্য সংখ্যা হয়েছে আট

▪ সার্কের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সমূহ

১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলি মূলত নিম্নলিখিত উদ্দেশ্য গুলোকে সামনে রেখেই সার্ক গঠনে সম্মতি জ্ঞাপন করেছিল। সার্কের যে প্রধান উদ্দেশ্য সমূহ রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

  • প্রথমতঃ সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখা এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ করা।
  • দ্বিতীয়তঃ সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সামাজিক, অর্থনীতি এবং কারিগরি ক্ষেত্রে পারস্পরিক আদান-প্রদান এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সামাজিক অগ্রগতি এবং উন্নয়ন ঘটানো।
  • তৃতীয়তঃ সার্কের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে স্বাধীনতা রক্ষা করা এবং ভৌগলিক অখণ্ডতা বজায় রাখা
  • চতুর্থতঃ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির জনগণের কল্যাণ সাধন করা এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটানো।

▪ সার্কের কিছু প্রধান সমস্যাঃ-

বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সার্ক প্রতিষ্ঠিত হলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রেই এটি তার লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার পেছনে রয়েছে সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, অবিশ্বাস, ভারসাম্যহীনতা, মতভেদ এবং সহযোগিতার অভাব

  • ভারত ও পাকিস্তানের বিরোধ: স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ লেগে রয়েছে। এর ফলে সামরিক প্রতিযোগিতা ও সীমান্ত সংঘর্ষ সার্কের উদ্দেশ্য সফল হতে দিচ্ছে না।
  • শ্রীলঙ্কা ও ভারতের সমস্যা: শ্রীলঙ্কায় তামিল জঙ্গিদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ নিয়ে সন্দেহ করা হয় যে, তার পেছনে ভারতের হাত থাকতে পারে। ফলে ভারত-শ্রীলংকার সম্পর্ক টালমাটাল।
  • সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ভারসাম্যহীনতা: সার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভারসাম্যহীনতা

▪ সার্কের সাফল্যঃ-

সার্কের অভ্যন্তরে কিছু সমস্যা থাকলেও যে উদ্দেশ্যে এটি গঠিত হয়েছিল, তার কিছু অংশ সফল হয়েছে। সার্কের সাফল্যের মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য:

  • বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধি: সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক আদান-প্রদান এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক যথেষ্ট পরিমাণে উন্নত হয়েছে।
  • সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ: দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে সন্ত্রাসবাদ দমনের ক্ষেত্রে সার্ক মোটামুটি সন্তোষজনক সাফল্য অর্জন করেছে।
  • খাদ্য নিরাপত্তা ও শিশু কল্যাণ: সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শিশু ও কন্যা কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

** সার্ক সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর :

১) সার্ক কবে গঠন করা হয়?
উত্তর : 1985 খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে।
২) কার উদ্যোগে সার্ক গঠিত হয়েছিল?
উওর : পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে।
৩) প্রতিষ্ঠাকালে সার্কের সদস্য সংখ্যা কত ছিল?
উত্তর : ৭।
৪) সার্কের সদর দপ্তর কোথায় অবস্থিত?
উওর : নেপালের কাঠমান্ডুতে সার্কের সদর দপ্তর অবস্থিত।
৫) আফগানিস্তান কবে সার্কে যোগদান করেছিল?
উওর : ২০০৭ সালে।
৬) সার্কের মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ রাষ্ট্র কোনটি?
উওর : ভারত।

Post a Comment

Previous Post Next Post