📝১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের চম্পারণ সত্যাগ্রহের কারণ ও ফলাফল📑

WB Class 10 History Champaran Satyagraha : Causes And Consequences In Bengali

মাধ্যমিক ইতিহাস ষষ্ঠ অধ্যায় তোমাদের মহাত্মা গান্ধী নেতৃত্বে পরিচালিত বিভিন্ন আন্দোলন সম্পর্কে বলতে হবে। তোমাদের বিভিন্ন পাঠ্য বইতে অহিংস অসহযোগ,আইন অমান্য এবং ভারতছাড়ো আন্দোলন সম্পর্কে একটু বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলেও গান্ধীজীর প্রথম দিকের আন্দোলন বলে যেমন বিহারের চম্পা চম্পারণ এবং গুজরাটের খেদা সত্যাগ্রহ সম্পর্কে সেই ভাবেও আলোচনা করা হয় নেই। সে কারণে আজ আমরা তোমাদের সুবিধার্থে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের বিহারের চম্পারন সত্যাগ্রহের কারণ ও ফলাফল অর্থাৎ লসম্পূর্ণ ইতিহাস এখানে তুলে ধরেছি।

---

▪ চম্পারণ সত্যাগ্রহ (Champaran Satyagraha)

১৯১৭-১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের বিহারের চম্পারন, মুজাফফরপুর, মতিহারী প্রভৃতি অঞ্চলের কৃষকরা ইংরেজদের জোরপূর্বক অলাভজনক নীল চাষ করার প্রতিবাদ স্বরূপ মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে যে সত্যাগ্রহ শুরু হয়েছিল সেটাই মূলত বিহারের বিহারের চম্পারণ সত্যাগ্রহ ছিল ভারতে মহাত্মা গান্ধীর শুরু করা প্রথম সত্যাগ্রহ।

চম্পারন সত্যাগ্রহের কারণঃ

• বিহারের চম্পারন সত্যাগ্রহের প্রধান কারণ ছিল ইংরেজদের চালু করার তিন কাঠিয়া প্রথা। এবার তিন কাঠিয়া প্রথা অনুযায়ী কৃষকরা নিজেদের বিঘা প্রতি তিন কাঠা জমিতে (৩/২০) নীল চাষ করতে বাধ্য হত এবং সেই জমিতে উৎপন্ন নীল কম দামে স্থানীয় নীলকরদের বিক্রি করতেও বাধ্য থাকতো।
• বিঘা প্রতি ৩ কাঠা জমিতে নীল চাষ করায় একদিকে যেমন তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো, ঠিক অন্যদিকে ঘরে খাদ্যশস্যের অভাব দেখা যেত।
• কৃষকদের যেহেতু কম দামে নীলকরদের কাছে নীল বিক্রি করতে হতো, সেই কারণে তাদের আর্থিক অবস্থা দিনের পর দিন এতটাই শোচনীয় হয়ে পড়ে যে, জমিদারদের খাজনা মেটানো তো দূরে থাক, তাদের সংসার চালানোই মুশকিল হয়ে পড়ে। মূলত এই সমস্ত কারণেই কৃষকরা ধীরে ধীরে বিদ্রোহের পথে পা বাড়ানোর কথা চিন্তা করেছিল।

বিহারের চম্পারণ সত্যাগ্রহের মহাত্মা গান্ধীঃ

১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের দিকে বিহারের মুজাফফরপুর, চম্পারন, মতিহারী প্রভৃতি অঞ্চলে চম্পারন সত্যাগ্রহ শুরু হয়। রাজকুমার শুক্লা নামের একজন স্থানীয় কংগ্রেস নেতার আমন্ত্রণে মহাত্মা গান্ধী বিহারের চম্পারণ সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন।

১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ১০ই এপ্রিল মহাত্মা গান্ধী বিহারের চম্পারণে আসেন। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার মহাত্মা গান্ধীকে বিহার ছাড়ার হুকুম দেয়। কিন্তু মহাত্মা গান্ধী সেখানে বলেন যে যদি তাকে গ্রেফতারও করা হয় তবুও তিনি চম্পারন ছাড়বেন না।

চম্পারন সত্যাগ্রহের ফলাফলঃ

• চম্পারণে পৌঁছানোর পরেই মহাত্মা গান্ধীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু যখনই তাঁর গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়ে, তখনই হাজার হাজার জনগণ মতিহারী আদালতের সামনে এসে হাজির হয়। তখন সরকার বাধ্য হয়েই মহাত্মা গান্ধীকে মুক্তি দেয়।
• এরপর মহাত্মা গান্ধী ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ, জে.বি কৃপালিনী, মহাদেব দেশাই প্রমূখ বিহারের চম্পারনের গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃষকদের বয়ান লিখতে থাকেন এবং এরপর তিনি ব্রিটিশদের তিন কাঠিয়া প্রথার সত্যতা সরকারের সামনে আনেন।
• বিহারে মহাত্মা গান্ধীর ব্যাপক জনসমর্থন দেখে শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারকে মহাত্মা গান্ধীর আন্দোলনের সামনে মাথা নত করতে হয় এবং এর ফলস্বরূপ ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে তিন কাঠিয়া প্রথা কে সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হয় এবং কৃষকদেরও নিজস্ব জমিতে স্বাধীনভাবে চাষ করার অধিকার দেওয়া হয়।

---

** এখানে ক্লিক করো : মাধ্যমিক ইতিহাস মকটেস্ট