সহজ সরল ভাবে বুঝে রাষ্ট্রের অর্থ এবং রাষ্ট্রের উপাদান বা বৈশিষ্ট্য সমূহ📑

 

best-note-on-the-definition-and-characteristics-of-the-state-in-bengali

WB Class 11 Political Science 1st Semester : 2nd Unit : Definition And Characteristics Of State In Bengali

আজ আমরা একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম সেমিস্টারের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য 'Theories And Concept' পেপারের দ্বিতীয় ইউনিট- 'State : Definition and Characteristics' এর উপর একটি একটি নোট শেয়ার করবো। আশা করি আজকের লেখনী পড়ে তোমাদের কাছে 'রাষ্ট্রের অর্থ এবং রাষ্ট্রের মূল বৈশিষ্ট্য বা উপাদান সমূহ (Definition And Characteristics of State) কী কী' সেটা খুব সহজেই পরিষ্কার হবে।


রাষ্ট্রের সংজ্ঞা বা অর্থ || Definition / Meaning Of State

ষোড়শ শতাব্দীর ইতালীয় চিন্তাবিদ টমাস নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি তাঁর বহু আলোচিত সমালোচিত দ্যা প্রিন্স নামক গ্রন্থে সর্বপ্রথম আধুনিক অর্থে রাষ্ট্র শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। সাধারণ মানুষ স্টেট বলতে রাজ্যকে বুঝলেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় স্টেট বলতে রাষ্ট্রকেই বোঝায়। এবার রাষ্ট্র বলতে ঠিক কী বোঝায় সেটাই আমাদের মূল আলোচ্য বিষয়। এবার-রাষ্ট্র সম্পর্কে নানা সংজ্ঞা প্রচলিত আছে। জার্মান লেখক সুলজে বলেছিলেন, প্রায় প্রত্যেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীই রাষ্ট্রের একটি সংজ্ঞা দিয়েছেন কিন্তু তাদের এরুপ দুটি সংজ্ঞার পরস্পরের মধ্যে সংগতি নেই। উপরন্তু, রাষ্ট্র শব্দটি বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করে থাকেন। 

রাষ্ট্র সম্পর্কে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ বিভিন্ন সংজ্ঞা দান করেছেন। সেই সকল সংজ্ঞার ভিত্তিতে আমাদের মনে রাষ্ট্র সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা তৈরি হতে পারে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক অ্যারিষ্টটলের মতে "রাষ্ট্র হলো কয়েকটি পরিবার ও গ্রামের সমষ্টি, যার উদ্দেশ্য হলো স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবন।

অধ্যাপক বার্জেস বলেছেন-রাষ্ট্র হল মানবজাতির সেই সুসঙ্ঘবদ্ধ অংশ যা ঐক্যবদ্ধভাবে সংঘটিত।

হলের (Hall) সংজ্ঞানুসারে "রাষ্ট্র হলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসাধনের জন্য নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত, বহিঃশত্রুর শাসন থেকে সর্বপ্রকারে যুক্ত জনসমাজ।

প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক আইনবিদ ওপেনহাইম রাষ্ট্রের একটি সংক্ষিপ্ত অথচ খুবই সুন্দর সংজ্ঞা দিয়েছেন। ওপেনহাইম বলেছেন যখন কোনো দেশের জন সাধারণ তাদের নিজেদের সার্বভৌম সরকারের অধীনে বসবাস করে তখনই তাকে একটি যথার্থ রাষ্ট্র বলা হয়।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি উইড্রো উইলসনের (Wilson) -মতানুসারে "রাষ্ট্র হইল আইনানুসারে সংগঠিত নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের অধিকারী এক জনসমাজ।

ব্লুউন্নি বলেন "রাষ্ট্র হইল কোন নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে রাষ্ট্রনৈতিকভাবে সংগঠিত জনসমাজ।” 

▪ তবে এই সকল রাষ্ট্র সম্পর্কিত সংজ্ঞা সেই ভাবেই সুসম্পন্ন বা স্পষ্ট নয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞাগুলির মধ্যে অধ্যাপক গার্নারের প্রদত্ত সংজ্ঞাটি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত এবং অধিক গ্রহণযোগ্য বলে মনে করা হয়। 

রাষ্ট্র সম্পর্কে অধ্যাপক গার্নার বলেছেন- রাষ্ট্র হলো এমন একটি অতি বৃহৎ বা নাতি বৃহৎ জনসমাজ যাহা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে বাস করে, যাহা বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ হইতে সর্বপ্রকারে মুক্ত অথবা প্রায় সেইরূপ এবং যাহার একটি সুসংগঠিত শাসন-ব্যবস্থা আছে, যে শাসনব্যবস্থার প্রতি অধিবাসীদের অধিকাংশ স্বাভাবিকভাবে আনুগত্য স্বীকার করে।


রাষ্ট্রের উপাদান বা বৈশিষ্ট্য সমূহ || Characteristics Of State In Bengali

রাষ্ট্র সম্পর্কে অধ্যাপক গার্নার যে সংজ্ঞা দিয়েছেন সেই সংজ্ঞার মধ্যেই আমরা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলি উল্লেখ পেয়ে থাকি। একটি রাষ্ট্রের মূলত চারটি উপাদান রয়েছে। যথা-

১) রাষ্ট্রের জনসমাজ ;

২) রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ; 

৩) রাষ্ট্রের সরকার এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ-

৪) রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতা।

▪ প্রথমতঃ রাষ্ট্রের জনসমাজঃ 

রাষ্ট্রের প্রথম উপাদান হলো রাষ্ট্রের জনসমাজ। কারণ জনসমাজ বা জনসমষ্টি যারা রাষ্ট্রের কল্পনা করা যায় না। এবার একটি রাষ্ট্রের জনসমাজ যেমন খুব কম হতে পারে ঠিক সেরকমই অতিবৃহৎও হতে পারে। যাইহোক আধুনিক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরস্থ জনসমাজকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১) রাষ্ট্রের নাগরিক :-যারা রাষ্ট্রের প্রতি আনন্দ প্রদর্শন করে এবং রাষ্ট্রের মধ্যে সকল প্রকার অধিকার ভোগ করে এবং যাদের আইনগত স্বীকৃতি রয়েছে তারাই হলেন রাষ্ট্রের নাগরিক।

২) বিদেশি :-অন্যদিকে একটি রাষ্ট্রের মধ্যে অন্যান্য রাষ্ট্রের যেসব সদস্য বসবাস করে তাদের বলা হয় বিদেশী।

৩) প্রজা :-আর যখন কোন একটি দেশ-বিদেশি সরকার কর্তৃক শাসিত হয় তখন সেই দেশের জনগণকে বলা হয় প্রজা।

▪ দ্বিতীয়ত রাষ্ট্রীয় ভূখণ্ডঃ 

রাষ্ট্রের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান না বৈশিষ্ট্য হলো রাষ্ট্রের নিজস্ব ভূখণ্ড থাকা। রাতের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় জনগণ জনগণ থাকলেই শুধু হয় না। রাষ্ট্রের জনগণের জন্য নির্দিষ্ট ভূখণ্ড থাকাও প্রয়োজন। তবে রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট ভূখণ্ড বলতে সেই রাষ্ট্রের কেবল অভ্যন্তরীস্ত ভূপৃষ্ঠকেই বোঝায় না! সেই সঙ্গে রাষ্ট্রের অন্তর্গত ভূগর্ভস্থ সকল পদার্থ, নদ নদী,গিরিপথ আকাশপথ এবং সমুদ্র উপকূল প্রভৃতিকেও বোঝায়। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় ভূখণ্ডের ওপরে অবস্থিত আকাশের ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত গাগণিক সীমারেখা একটি রাষ্ট্রের ভূখণ্ডের অন্তর্গত বলে মনে করা হয়। অন্যদিকে বিভিন্ন সম্মেলনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন,অস্ট্রিয়া জার্মানি সহ কুড়িটি রাষ্ট্র এটা ঠিক করেছে যে রাষ্ট্রের উপকূলবর্তী সমুদ্রের তিন মাইল পর্যন্ত জলভাগ রাষ্ট্রীয় ভূখণ্ডের অন্তর্গত হবে।

▪ তৃতীয়তঃ সরকারঃ 

রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত ধারণা অর্থাৎ রাষ্ট্রের কোনো বাস্তব রূপ আমরা দেখতে পাই না। কিন্তু রাষ্ট্রের সেই বিমূর্ত ধারণাকেই বাস্তব রূপ দান করে থাকে সরকার। এবার মনে প্রশ্নই আসতেই পারে সরকার বলতে আসলে কী বোঝায় সহজ ভাষায় বলতে গেলে একটি রাষ্ট্র যে শাসন যন্ত্র বা প্রতিষ্ঠান বা কাঠামোর মধ্যে দিয়ে তার যাবতীয় ইচ্ছা, পরিকল্পনা বা কার্য করে থাকে সেটাই হলো সরকার।

উইলোবি বলেছেন- সরকার হল এমন একটি প্রতিষ্ঠান বা যন্ত্র যার সাহায্যে রাষ্ট্র তার সকল ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতে পারে। তাই সরকার হলো রাষ্ট্র গঠনের অন্যতম উপাদান। সরকারকে মূলত রাষ্ট্রের মস্তিষ্ক বলে বর্ণনা করা হয়। কারণ সরকার ছাড়া কোনো রাষ্ট্রের পক্ষেই তার জনগণের জন্য নীতি নির্ধারণ করা এবং সেই নীতি বাস্তবে প্রয়োগ করা এবং যেকোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়।

▪ চতুর্থঃ রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতাঃ 

রাষ্ট্র গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি হলো সার্বভৌমিক ক্ষমতা বা রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতা। কারণ কোনো একটি দেশের ক্ষেত্রে যদি উপরিক্ত তিনটি উপাদান থাকে কিন্তু এই চতুর্থ উপাদান সার্বভৌমিকতা না থাকে,তাহলে তাকে রাষ্ট্র বলে বিবেচনা করা যাবে না।

রাষ্ট্রের সার্বভৌমিক ক্ষমতা বলতে কী বোঝায়? 

সহজ ভাষায় রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতা বলতে রাষ্ট্রের চূড়ান্তে ক্ষমতাকে বোঝায়। রাষ্ট্রের সার্বভৌমিক ক্ষমতা বলতে এমন এক ক্ষমতাকে বোঝানো হয় যে ক্ষমতার দ্বারা রাষ্ট্র যেমন একদিকে তার নিজের ভূখণ্ডে চরম ক্ষমতা বা চরম কর্তৃত্ব ভোগ করে একইভাবে সেই ক্ষমতার মাধ্যমে একটি রাষ্ট্র অন্যান্য রাষ্ট্রের সকল প্রকার নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত থাকে। অর্থাৎ একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন দেশ মানেই সেই রাষ্ট্রের সার্বভৌমিক ক্ষমতা রয়েছে। রাষ্ট্র সার্বভৌম কথাটির অর্থ হলো রাষ্ট্র তার নিজের ভূখণ্ডে চরম ক্ষমতা ব চরম কর্তৃত্বের অধিকারী।

** রাষ্ট্রের অন্যান্য কিছু উপাদান:-

তবে অনেকে মনে করেন রাষ্ট্রের এই মূল চারটি উপাদান ছাড়াও রাষ্ট্রের অন্যান্য কিছু বৈশিষ্ট্য বা উপাদান রয়েছে।

১) প্রথমত রাষ্ট্রের স্থায়িত্বঃ আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অনেকেই স্থায়িত্বকে রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বলে মনে করেন তাদের মতে যে রাষ্ট্রের কোন স্থায়িত্ব নেই তাকে আর যাই হোক কখনোই রাষ্ট্র বলে অভিহিত করা যায় না.।

২) দ্বিতীয়ত অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতিঃ অনেকে মনে করেন একটি রাষ্ট্র যদি অন্যান্য রাষ্ট্র দ্বারা স্বীকৃতি না লাভ করে তখন তাকে রাষ্ট্র বলে বিবেচনা করা যায় না। তাই একটি রাষ্ট্রকেই অন্যান্য রাষ্ট্র দ্বারা স্বীকৃত প্রাপ্ত হতে হবে।

৩) তৃতীয়ত জাতীয়তাবাদঃ জাতীয়তাবাদের বন্ধনকেও অনেকে রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বলে চিহ্নিত করে থাকেন।  তাদের যুক্তি হলো কোনো একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের বসবাসকারী জনসমাজের মধ্যে যদি জাতীয়তাবাদের বন্ধন না থাকে, তাহলে কখনোই সেটি একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না।


Post a Comment

Previous Post Next Post