একাদশ শ্রেণীতে প্রথমবার দর্শন নেওয়ার পর যারা প্রথমবারের জন্য ভারতীয় দর্শন পড়ছো বা কলেজের যাদের দর্শন বিষয়টি রয়েছে তাদের ভারতীয় দর্শন বা ইন্ডিয়ান ফিলোসফির অংশ হিসেবে বৌদ্ধ দর্শন এবং বৌদ্ধ ধর্মের চারটি আর্য সত্য (The Four Noble Truths of Buddhism) পড়তে হবে। তাই আজকে আমরা সকল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পরীক্ষার উপযোগী একটি সহজ সরল নোট এই ব্লগ পোষ্টের মাধ্যমে শেয়ার করলাম।
বৌদ্ধ ধর্মের চারটি আর্য সত্য || Discover the Four Noble Truths of Buddhism – A Complete Guide
রাজপুত্র সিদ্ধার্থ সংসার ধর্ম ত্যাগ করে সন্ন্যাস নিয়ে দীর্ঘ দিন তপস্যা করার মাধ্যমে দিব্য জ্ঞান অর্থাৎ বোধি লাভ করেন। এবং বোধি লাভের মাধ্যমেই গৌতমী হয়ে ওঠেন গৌতম বুদ্ধ। গৌতম বুদ্ধ তার এই তপস্যার মাধ্যমে মূলত জীবনের সত্যকে অনুসন্ধান, জানতে চেয়েছিলেন। মনুষ্য জীবনের দুঃখ দুর্দশা থেকে কী করে মুক্ত হওয়া যায় সেটা অনুসন্ধান করাও তার তপস্যারই উদ্দেশ্য ছিল। দিব্য জ্ঞান লাভের পর গৌতম বুদ্ধ তার আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা থেকে, মানুষের জীবনে যে দুঃখ দুর্দশা দূর করতে বা মানুষকে দুঃখ দুর্দশা থেকে বের করতে তিনি চারটি সত্যের কথা।
▪ বুদ্ধের মতে সেই চারটি সত্য হলো-
▪ প্রথমতঃ মানুষের দুঃখ রয়েছে
▪ দ্বিতীয়তঃ দুঃখের কারণ রয়েছে ;
▪ তৃতীয়তঃ দুঃখের নির্মাণ বা দুঃখের নিবৃতি এবং
▪ চতুর্থত দুঃখ নির্মাণের উপায়। এই চারটি সত্যকেই বৌদ্ধ ধর্মে চারটি আর্য সত্য বলা হয়েছে।
▪ প্রথম আর্য সত্য দুঃখ আছেঃ বৌদ্ধ দর্শনের প্রথম আর্য সত্যটি হল দুঃখ আছে। গৌতম বুদ্ধ বলেন এই পৃথিবীতে সবই দুঃখময়। আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যা আমাদের আসক্তি প্রসূত সেখানেই দুঃখ রয়েছে। মানুষের জীবনে দুঃখ হলো নিত্য সঙ্গী। মানুষের জীবনের সুখ অবশ্যই রয়েছে কিন্তু সুখ হল ক্ষণস্থায়ী এবং দুঃখ দীর্ঘস্থায়ী। গৌতম বুদ্ধ এও বলেন যে পৃথিবীর আরম্ভ থেকে যতো অশ্রু ঝরেছে, তার তুলনায় পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্রের জলের পরিমাণ অতি তুচ্ছ।
▪ দ্বিতীয় আর্য সত্য দুঃখের কারণ আছেঃ গৌতম বুদ্ধ বলেন মানুষের জীবনে যদি দুঃখ থেকে থাকে তাহলে সেই দুঃখের কারণও রয়েছে। অর্থাৎ এই সত্যটি মূলত কার্যকারণ সম্বোন্ধীয় নীতি বা প্রতিত্যসুমুৎপাদ নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রতিত্যসুমুৎপাদ নীতি অনুসারে জগতের প্রতিটি ঘটনারই পেছনে তার একটি নির্দিষ্ট কারণ থাকে। দুঃখ যেহেতু ঘটনা সেই কারণে দুঃখেরও কারণ রয়েছে। বৌদ্ধ দর্শনে দুঃখের কারণ হিসেবে মূলত বারোটি বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে যেগুলোকে একত্রে বলা হয় দ্বাদশ নিদান বা ভবচক্র। ১২টি নিদানের মধ্যে অবিদ্যাকেই দুঃখের অন্যতম বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
▪ তৃতীয় আর্য সত্য দুঃখের নির্মাণ বা দুঃখ নিরোধঃ গৌতম বুদ্ধ বলেন মানুষের জীবনে দুঃখ অবশ্যই আছে কিন্তু সেই দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ বা দুঃখ নিরোধ অবশ্যই সম্ভব। বৌদ্ধ দর্শনে দুঃখ থেকে মুক্তি লাভের সেই অবস্থাটিকে নির্বাণ বলা হয়েছে। গৌতম বুদ্ধের মধ্যে যে দ্বাদশ নিরান এর কারণে দুঃখ হয় সেই কারণগুলিকে রোধ করতে পারলেই দুঃখ নিরোধ সম্ভব হয়। মানুষ তখন নির্বাণ লাভ করে এবং নির্বাণ লাভের মাধ্যমেই মানুষের এই ভবচক্র বা জন্ম মৃত্যু চক্র শেষ হয়।
▪ চতুর্থ আর্য সত্য দুঃখ নিরোধের মার্গঃ গৌতম বুদ্ধ বলেন দুঃখের নির্বাণ বা দুঃখনিরোধ সম্ভব। এবার কী করে সম্ভব সেটাই তাঁর চতুর্থ আর্য সত্য তিনি বলেছেন। মানুষের জীবনের দুঃখ দুর্দশা দূর করার জন্য বা দুঃখ দুর্দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য গৌতম বুদ্ধ ৮ টি মার্গ বা পথ অনুসরণ করার কথা বলেছেন। গৌতম বুদ্ধ প্রদর্শিত দুঃখ-নিবৃত্তির আটটি মার্গ বা পথকে (সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প,সম্যক বাক, সম্যক কর্মান্ত, সম্যক আজীব, সম্যক ব্যায়াম, সম্যক স্মৃতি ও সম্যক সমাধি) বৌদ্ধ দর্শনে অষ্টাঙ্গিক মার্গ বলা হয়।
▪ উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায়, বৌদ্ধ দর্শনে মানুষের দুঃখ দুর্দশাময় জীবনকে চারটি আর্য সত্যের (Noble Truths of Buddhism) মধ্যে বর্ণনা করা হয়েছে। এর মধ্যে চতুর্থ আর্য সত্য মানুষের দুঃখ দুর্দশাময় জীবন থেকে মুক্তি লাভের উপায় বা দুঃখ নিরোধের বা নিবারণের উপায় উল্লেখ করা হয়েছে। বুদ্ধদেব মানুষের জীবনের দুঃখ নিরোধের উপায় হিসেবে আটটি পথের সন্ধান দিয়েছিলেন। যেগুলি অষ্টাঙ্গিক মার্গ নামে পরিচিত। তাই গৌতম বুদ্ধের বা বৌদ্ধ দর্শনের চারটি আর্য সত্য মানুষের জীবনের ক্ষেত্রে খুবই মূল্যবান এবং গ্রহণযোগ্য
Post a Comment