▪ থমাস আলভা এডিসনের প্রাথমিক জীবন
থমাস এডিসনের জন্ম হয়েছিল ১১ ই ফেব্রুয়ারি ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকা নিউ মিলানে। থমাস এডিসনের পিতা ছিলেন স্যামুয়েল এডিসন। থমাস এডিসনের পিতার আর্থিক অবস্থা প্রথম দিক থেকেই খারাপ ছিল। উনিই ছিলেন তো সে একজন কাঠ মিস্ত্রী ছিলেন। এবং সেই সঙ্গে অন্যান্য ছোটখাটো কাজ করতেন। ফলে পারিবারিক আর্থিক স্বচ্ছতা সেরকম ভাবেও কোনোদিন তৈরি হয়নি। ছোটবেলাটা খুব সাধারণভাবেই কেটেছে। তবে পিতার আর্থিক অবস্থা সেরকম ভালো না হলেও থমাস এডিসনের পিতাই কিন্তু থমাস এডিসনকে শিক্ষার গুরুত্বটা বুঝিয়েছিলেন এবং তার মধ্যে বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা তৈরি করেছিলেন। অপরদিকে মা ছিলেন ন্যান্সি এডিসন। একটি শিশুকে মানুষের মতো মানুষ করে তুলতে বা সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা ঠিক কতটা, সেটা আমরা থমাস এডিসনের মায়ের কাছ থেকে শিখতে পারি। কারণ নিজের সন্তানের জন্য এমন কিছু করেছিলেন যার জন্য আজকে গোটা বিশ্ব থমাস এডিসনকে এক নামে চেনে।
▪ থমাস আলভা এডিসনের শিক্ষাজীবন
যতদূর শোনা যায় থমাস এডিসনের শিক্ষার বেশিরভাগটাই হয়েছিল তার মায়ের কাছে। মা ন্যান্সি এডিসনই প্রথম এবং প্রকৃত শিক্ষক। এবার স্কুল বা অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে কেন থমাস এডিসনের শিক্ষা তার মায়ের কাছেই হয়েছিল সেই গল্পটাই সবচেয়ে অদ্ভুত।
▪ মায়ের ছোট্ট এক মিথ্যেতে যেভাবে সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়েছিলেন থমাস এডিসন -
গল্পটা এরকম যে-উনি প্রাথমিক শিক্ষার জন্য একটি স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু থমাস সেই স্কুলে নিজের শিক্ষা শেষ করতে পারেননি। জন্মের সময় থমাস এডিসনের মাথাটা ছিল বেশ বড় এবং শরীরটা ছিল বেশ রোগা-পাতলা। তিনি যখন স্কুলে ভর্তি হন তখন বেশিরভাগ সময়টাই তিনি ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারতেন না। নিজের কল্পনার জগতে ডুবে থাকতে দেখা যেত থমাস এডিসনকে। পড়াশোনায় তিনি এতো দুর্বল হওয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত স্কুল থেকে ছোট্ট থমাসের হাতে,একটি চিঠি সমেত তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। স্কুলের শিক্ষক অবশ্য এটা বলে দিয়েছিলেন যে সে যেন সেই চিঠিটি তার মায়ের হাতেই দেয়। এই কারণে থমাস সেই চিঠিটি সেদিন নিজে খুলে দেখেননি তাতে কী লেখা রয়েছে।
বাড়িতে ফিরে আসার পর থমাস এডিসন যখন শিক্ষকের দেওয়া সেই চিঠিটি তার মা অর্থাৎ ন্যান্সি এডিসনের হাতে দেন, তখন ন্যান্সি সেই চিঠিতে পড়েন যে 'আপনার ছেলে পড়াশুনায় এতটাই দুর্বল যে তাকে আর আমাদের এই স্কুলের রাখা সম্ভব হচ্ছে না'।
সেদিন শিক্ষকের দেওয়া সেই চিঠিটি পড়ে মা ন্যান্সির যথেষ্ট খারাপ লেগেছিল ঠিকই,কিন্তু তিনি সেটা নিজের সন্তানকে বুঝতে দেননি। যখন ছোট্ট শিশুটি তার মাকে জিজ্ঞেস করে যে চিঠিতে কী লেখা রয়েছে, তখন তার মা এর জবাবে বলেন যে-
চিঠিতে এটাই লেখা রয়েছে যে আপনার সন্তান পড়াশোনায় এতটাই ভালো বা তার বুদ্ধি এতটাই বেশি যে, তাকে পড়ানোর জন্য আমাদের এই স্কুলে যথেষ্ট শিক্ষক নেই। তার জন্য এটাই ভালো হবে যে এখন থেকে তাকে আপনি নিজে পড়ান।'
সেদিন থেকে ছোট্ট থমাসের শিক্ষা শুরু হয় তারা মায়ের কাছে এবং এভাবে থমাসের মা ছোটবেলাতেই তার মনে এটা ঢুকিয়ে দেন যে থমাস একজন অত্যন্ত বুদ্ধিমান এক ছাত্র। এবং তার মায়ের বলা এই ছোট্ট মিথ্যে কথাটার জন্যই তার পরবর্তী জীবনে এতো সফলতা আসে।
▪ থমাস এডিসনের কর্মজীবন
থমাস আলভা এডিসনের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল মাত্র ১২ বছর বয়সে। উনি শুধুমাত্র একজন মহান বৈজ্ঞানিকন আবিষ্কারক ছিলেন না সেই সঙ্গে একজন ব্যবসায়ীও ছিলেন। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথমবারের জন্য ট্রেন যাত্রার সময় উনি একজন স্টেশন মাস্টারের সংস্পর্শে আসেন এবং সেই থেকে রেজিস্ট্রেশনে তার কর্মজীবন শুরু হয় উনি রেলে নিজের প্রকাশিত একটি পত্রিকা 'গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক হেরাল্ড' এবং ক্যান্ডি বেঁচচে শুরু করেন। যদিও এই কর্মজীবন তার দীর্ঘ হয়নি।
▪ থমাস এডিসনের আবিষ্কার
থমাস এডিসনের এতো আবিষ্কারের পেছনে ছিল ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা এবং এক্সপেরিমেন্টের প্রতি আগ্রহ। উনি বিভিন্ন বিষয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার প্রতি এতটাই আগ্রহ ছিলেন যে মাত্র ১০ বছর বয়সেই উনি নিজের বাড়িতে একটি নিজস্ব ল্যাব তৈরি করে নিয়েছিলেন। এরপর ১২ বছর বয়সে উনি যখন ট্রেনে নিজের কর্ম জীবন শুরু করেছিলেন তখন সেখানে ট্রেনের একটি কম্পার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে নিজস্ব ছোটখাটো একটা ল্যাব সেখানে তৈরি করেন। কিন্তু সেখানে দুর্ঘটনা বসতো আগুন লেগে যাওয়ায় সেই ল্যাবটি তার হাতছাড়া হয়েছিল।
▪ প্রথমত ফনোগ্রাফ যন্ত্রের আবিষ্কার
যাই হোক পরবর্তীকালে থমাস এডিসন নিজের বাড়িতেই বিভিন্ন বিষয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে থাকেন। টমাস এডিসিনের নাম প্রথমবারের জন্য সবার কাছে ছড়িয়ে পড়েছিল যখন উনি ফনোগ্রাফ যন্ত্রের ওপর গবেষণা করতে শুরু করেন। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে আবিষ্কৃত এটি ছিল প্রথম যন্ত্র যার মাধ্যমে সাউন্ড রেকর্ড করা যেত।
▪ দ্বিতীয় : বৈদ্যুতিক বাল্বের উপর কাজ
অনেকে মনে করে যে থমাস এডিসন বৈদ্যুতিক বাল্ব আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু তেমনটা নয়। বৈদ্যুতিক বাল্ব তার আগে থেকেই ছিল কিন্তু উনি শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক বাল্ব দীর্ঘমেয়াদী কিভাবে হবে সেটার উপর কাজ করেছিলেন। আগের সময় যে সমস্ত বাল্ব ছিল সেই বাল্বের ফিলামেন্ট খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যেত। তাই তিনি এমন কোনো ফিলামেন্টের খোঁজে ছিলেন যেটা খুবই দীর্ঘমেয়াদি হবে। এভাবে থমাস এডিসন কয়েক হাজার বারের প্রচেষ্টার ব্যর্থতার পর, অবশেষে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে এমন একটি বাল্বের ফিলামেন্ট বানাতে সক্ষম হন যেটা প্রায় বারোশো ঘন্টা পর্যন্ত টিকতে পারতো। মনে করা হয় থমাস আলভা এডিসন দীর্ঘমেয়াদী বৈদ্যুতিক বাল্বের ফিলামেন্ট তৈরির প্রচেষ্টায় প্রায় ১০,০০০ বার ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু উনি যদি সেদিন এতবার ব্যর্থ হওয়ার পরও আবার চেষ্টা না করতেন, তাহলে হয়তো বা আজ আমরা এভাবে নিচে বসে থাকতে পারতাম না।
▪ থমাস এডিসনের শেষ জীবন
সারা জীবন বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গবেষণা? নানান ব্যর্থতা এবং সফলতার মধ্যে দিয়ে যখন তিনি তার জীবনের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে আসেন তখন ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে ধীরে ধীরে তার শরীর খারাপ হতে শুরু করে। মৃত্যু কয়েক বছর আগে তিনি কানে কম শুনতে শুরু করেন এবং ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত হন। এভাবে এই মহান বিজ্ঞানী এবং আবিষ্কারকের শরীরের মেয়াদ যখন শেষ হয়ে যায়,তখন ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ অক্টোবর নিউ জার্সির ওয়েস্ট অরেঞ্জে তার মৃত্যু ঘটে।
আরও পড়ো👉 : পড়ার জন্য গ্রামে স্কুল ছিলনা! আজ সেই মানুষটাই ইসরোর চেয়ারম্যান।
Post a Comment