ফ্রেডরিক টেলরের বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা তত্ত্ব

 

scientific-management-theory-by-fw-taylor-meaning-principles-examples-in-bengali

ভূমিকাঃ জনপ্রশাসন সম্পর্কিত যে ক্লাসিক্যাল থিওরি গুলো রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো সাইন্টিফিক ম্যানেজমেন্ট থিওরি বা বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা তত্ত্ব. আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার ফ্রেডরিক উইনস্লো টেলরকে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা তত্ত্বের জনক বলা হয়।

কারণ টেলর-ই সর্বপ্রথম কাজের ক্ষেত্রে বা কর্মপদ্ধতিতে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগের কথা বলেছিলেন।


*** বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা তত্ত্ব কী?

সাইন্টিফিক ম্যানেজমেন্ট থিওরি বা বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা তত্ত্ব হলো একটি বিশেষ পদ্ধতি বা ব্যবস্থা যার মাধ্যমে যেকোনো কাজকে একটি নির্দিষ্ট এবং সঠিক পদ্ধতিতে করে,তার উৎপাদনশীলতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায়। আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার ফ্রেরিক টেলর ১৯০০ দশকের দিকে এই তত্ত্ব তুলে ধরেছিলেন। 


** বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা তত্ত্বের মূল লক্ষ্যঃ

মূলত কর্মক্ষেত্রে অদক্ষতা, কম উৎপাদনশীলতা কর্মচারী এবং মালিকের মধ্যে সংঘর্ষ এই জিনিসগুলোকে দূর করে-

১) যেকোনো কাজকে সবচেয়ে ভালো উপায়ে কী করে করা যায় সেই পদ্ধতি খুঁজে বের করা ;

২) যেকোনো কাজকে সঠিকভাবে করে, কর্মচারীদের উৎপাদনশীলতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি;

৩) এবং কর্মচারী এবং ব্যবস্থাপনার মধ্যে সঠিক সমন্বয় করাই ছিল বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা তত্ত্বের মূল লক্ষ্য।


** সায়েন্টিফিক তত্ত্বের মূল নীতিঃ 

টেলর যে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার তত্ত্ব দিয়েছিলেন সেই তত্ত্বে তিনি কিছু নীতির উল্লেখ করেছিলেন। বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা তত্ত্বে বলা হয়-

১) প্রথমতঃ কাজের সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় বের করাঃ প্রতিটি কাজকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করতে হবে এবং যে কোনো কাজকে সবচেয়ে ভালো উপায়ে কী করে করা যায় সেই সঠিক কাজের পদ্ধতিটি খুজে বের করতে হবে। 


২) দ্বিতীয়তঃ কাজ ও দায়িত্বের বন্টনঃ টেলর বলেন প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার নির্দিষ্ট যোগ্যতা এবং দক্ষতার ভিত্তিতে কাজ এবং দায়িত্ব বন্টন করে দিতে হবে। এতে  অর্থাৎ সঠিক কর্মীর কাছে সঠিক কাজ। এছাড়াও কর্মীরা শুধুমাত্র নিজেদের নির্দিষ্ট কাজের ওপর গুরুত্ব দেবেন অন্যদিকে ম্যানেজার সেই কাজের তদারকি করবেন।


৩) তৃতীয়তঃ কর্মচারীদের প্রশিক্ষণঃ নিজের কাজ সঠিকভাবে করার জন্য কর্মীদের অবশ্যই সঠিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে তারা নিত্য নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে নিজের কর্ম দক্ষতা আরো বৃদ্ধি করতে পারে।


৪) চতুর্থঃ কর্মচারীদের প্রাপ্য প্রদানঃ বলা হয় কর্মচারীদের কাজের জন্য তাদের অবশ্যই নির্দিষ্ট এবং সঠিক পারিশ্রমিক বা প্রাপ্য পুরস্কার দিতে হবে। যাতে তারা কাজের প্রতি আরো বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে।


৫) এছাড়াও বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা তত্ত্বে বলা হয় কর্মচারী এবং মালিকের মধ্যে পারস্পরিক সংঘর্ষ এবং বিরোধ যাতে দূর হয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে। বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা তত্ত্ব অনুযায়ী যদি এই নীতিগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়, তাহলে যেকোনো সংস্থা বা প্রতিষ্টানের কর্মদক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।


** বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা তত্ত্বের সমালোচনাঃ

ফ্রেডরিক টেলরের সাইন্টিফিক ম্যানেজমেন্ট থিউরির কিছু ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এই তত্ত্বকে সমালোচনা করা হয়ে থাকে। যেমন-


১) সাইন্টিফিক ম্যানেজমেন্ট থিওরিতে উৎপাদনশীলতা এবং দক্ষতার উপর এত বেশি করে জোর দেওয়া হয় যে তাতে কর্মীদের চাহিদাগুলো সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হয়।


২) দ্বিতীয়ত সমালোচকরা বলেন টেলারের এই তত্ত্বের কর্মীদের সম্পূর্ণভাবে মেশিনের মত করে ব্যবহার করা হয় যাদের কাজ শুধুমাত্র হয় উৎপাদন করা।


৩) সমালোচকরা আরো বলেন টেলারের এই সাইন্টিফিক ম্যানেজমেন্ট থিওরি শুধুমাত্র উৎপাদনশীলতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলে তার এই তত্ত্ব সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য নয়।


**জনপ্রশাসনে সাইন্টিফিক ম্যানেজমেন্ট থিওরির প্রয়োগঃ

ফ্রেডরিক টেইলরের সাইন্টিফিক ম্যানেজমেন্ট থিওরির গুরুত্ব এটাই যে জনপ্রশাসনেও এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়। সাইন্টিফিক ম্যানেজমেন্ট থিওরি অনুসারে জনপ্রশাসনের ক্ষেত্রে বা আমলাতন্ত্রের ক্ষেত্রে যোগ্য এবং দক্ষ আমলাদের মধ্যে বা কর্মীদের মধ্যে সঠিকভাবে দায়িত্ব এবং কাজ ভাগ করে দেওয়া, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ প্রদান-এই বিষয়গুলো সাইন্টিফিক ম্যানেজমেন্ট থিওরির নীতি অনুসরণ করে হয়ে থাকে। সেকারণেই বলা যায় জনপ্রশাসনেও এই তত্ত্বের গুরুত্ব রয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post