জনপ্রশাসনের অর্থ এবং জন প্রশাসনের পরিধি বা আলোচনার বিষয়বস্তু

meaning-and-scope-of-public-administration-in-bengali

যারা বর্তমানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে নিজের স্নাতক বা গ্রাজুয়েশন শেষ করছো এবং যারা প্রথমবারের জন্য জনপ্রশাসন বিষয়টি পড়া শুরু করেছো,আমাদের এই ব্লগপোস্ট আজকে শুধুমাত্র তাদের জন্যই। পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা জনপ্রশাসন বিষয়টি কী এই বিষয়টা বুঝতে অনেকেরই সমস্যা হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের বা পাঠকদের জনপ্রশাসন বিষয়টির অর্থ বুঝতে যাতে কোন অসুবিধা না হয়,সে কারণেই আজকে আমরা 'Meaning Of Public Administration' অর্থাৎ জনপ্রশাসনের অর্থ এবং জনপ্রশাসনের বিষয়বস্তু বা আলোচনার পরিধি খুবই সহজভাবে তুলে ধরেছি। আশা করি পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ছাত্র-ছাত্রীদের আজকের এই ব্লগ পোস্টটি উপকারে আসবে।

Meaning Of Public Administration ||  জনপ্রশাসনের অর্থ

 জনপ্রশাসন বিষয়টি কার্যক্রম এবং পাঠ্য বিষয় উভয়ই। একজন প্রশাসনিক আধিকারিক এর কাছে জনপ্রশাসন যেমন একটি কার্যক্রম অন্যদিকে পাঠকের কাছে এটি একটি পাঠ্য বিষয়। 

জনপ্রশাসন কথাটির মধ্যে রয়েছে জন এবং প্রশাসন। এক্ষেত্রে প্রশাসন শব্দের আক্ষরিক অর্থ দ্বারাই উৎকৃষ্ট উপায়ে শাসন। অন্যদিকে জন বলতে বোঝায় একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার।সুতরাং জনপ্রশাসন শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় উৎকৃষ্ট উপায় সরকারের শাসন কার্য পরিচালনা করা। 


▪ জনপ্রশাসন বিষয়টিকে সংজ্ঞায়িত করা সহজ বিষয় নয়। তবে বিভিন্ন সংজ্ঞা থেকে জনপ্রশাসন সম্পর্কে একটি ধারণা নেওয়া যেতে পারে। 

জনপ্রশাসনের জনক উইড্রো উইলসের বলেছেন আইনের বিস্তৃত এবং সুশৃংখল প্রয়োগই হল জনপ্রশাসন।

লিওনার্দো হোয়াটের মতে জননীতির বা সরকারি নীতি সঠিক বাস্তবায়ন সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ জনপ্রশাসন বলে অভিহিত করা যেতে পারে।

ফিটনারের মতে জনগণ ও সরকারের সমন্বয়ের মধ্যে দিয়ে যেভাবে সরকারি লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করা হয় সেটাই হলো জনপ্রশাসন। 

▪ উপরিক্ত সংজ্ঞার ভিত্তিতে বলা যেতে পারে, জনগণের কল্যাণের স্বার্থে নির্ধারিত বিভিন্ন সরকারি নীতি আইন এর সঠিক বাস্তবায়ন এবং সার্বজনীক কাজকর্মকে সঠিকভাবে পরিচালনাই হল জনপ্রসাশন।

অন্যভাবে বলা যায় জনগণের স্বার্থে সরকারের তৈরি বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক নীতির সঠিক বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় হল জনপ্রশাসন


Scope Of Public Administration In Bengali ||জন প্রশাসনের পরিধি বা আলোচনার বিষয়বস্তুঃ 

লোক প্রশাসন একটি সুবিস্তৃত এবং গতিশীল শাস্ত্র হওয়ার কারণে জন প্রশাসনের বিষয়বস্তু বা আলোচনা পরিধি অনেক বড়ো। এছাড়াও এটির আলোচনা পরিধি সঠিকভাবে নির্ধারণ করাও অত্যন্ত জটিল একটি বিষয়। লোক প্রশাসন বা জনপ্রশাসনের পরিধি বা আলোচনার বিষয়বস্তু কী এই নিয়ে বিদ্বানদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক করেছে। তবে যাই হোক লোক প্রশাসনের পরিধি নিয়ে কিছু দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে যার দ্বারা এর পরিধি বা আলোচনার বিষয়বস্তু নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়েছে। লোক প্রশাসনের পরিধি নিয়ে মোট চারটি দৃষ্টিভঙ্গ রয়েছে। 

১) ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গি ; ২) সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি 

৩) POSDCORB দৃষ্টিভঙ্গি এবং ৪) আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি বা জনকল্যাণকর দৃষ্টিভঙ্গি. 

▪ জনপ্রশাসনের ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গিঃ


▪ লিওনার্দো হোয়াইড,সাইমন,নিগ্রো মার্কস প্রমুখ হলেন লোক প্রশাসনের ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থক। জন প্রশাসনের ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থকরা বলেন সরকারের তিনটি অঙ্গ অর্থাৎ আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং শাসন বিভাগের কার্যক্ষেত্র মূলত লোক প্রশাসনের আলোচনার বিষয়বস্তু। এছাড়াও জনপ্রশাসন সম্পর্কে নিগ্রো বলেন যে, জনপ্রশাসনে  মূলত সরকারের তিনটি বিভাগের কার্য, তাদের সম্বন্ধে জননীতি, সমাজসেবার মতো এই বিষয়গুলো যুক্ত থাকে। কিন্তু জনপ্রশাসনের এই দৃষ্টিভঙ্গির জন্য জনপ্রশাসনের অর্থ অত্যন্ত অস্পষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে এই ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গি সর্বদা গ্রহণযোগ্য নয়।

জনপ্রশাসনের পরিধি সম্পর্কিত সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিঃ


জনপ্রশাসনের পরিধি সম্পর্কিত দ্বিতীয় দৃষ্টিভঙ্গি হলো সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি। ব্যবহারিক দিক থেকে জনপ্রশাসনের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিকেই স্বীকার করা হয়। সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী জনপ্রশাসনের সম্বন্ধ মূলত সরকারের শাসন বিভাগের কার্য সম্বন্ধীয় বিষয়ের মধ্যেই সীমিত। সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী জনপ্রশাসনের আলোচনায় মূলত শাসন বিভাগের  কার্যপদ্ধতি, কার্যপ্রণালী, প্রশাসনের নীতি তাদের নিরীক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ সম্বন্ধিত বিষয় যুক্ত।

জন প্রশাসনের পরিধি সম্পর্কিত POSDCORB দৃষ্টিভঙ্গিঃ 


জনপ্রশাসনের বিবর্তনের দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯৩৭ সালে লুথার গুলিক এবং লিন্ডার আর উইকের প্রবন্ধ 'Papers On The Science Of Administration' প্রকাশিত হয় এবং এই গ্রন্থে তারা জনপ্রশাসনের পরিধিই কয়েকটি বৈজ্ঞানিক সূত্রের সাহায্যে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। লুথার গুলিকের এই POSDCORB অবধারণারপ্রত্যেকটি অক্ষরই প্রশাসনের একটা নির্দিষ্ট কার্যের প্রতি সংকেত প্রদান করে।। যথা-

P= Planning (পরিকল্পনা তৈরি করা)

O= Organization( সংগঠন তৈরি করা)

S=Staffing ( কর্মচারীদের ব্যবস্থা করা বা নিয়োগ করা)

D= Direction.(তাদের নির্দেশনা প্রদান) 

CO= Co- Ordination (কাজের মধ্যে সমন্বয়)

R = Reporting (রিপোর্ট তৈরি করা) 

B= Budgeting ( এবং বাজেট তৈরি করা)


** জন প্রশাসনের পরিধি সম্পর্কিত এই ধারণা ছোট, বড় সরকারি,বেসরকারি সমস্ত ধরনের সংগঠনেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই কারণে এই ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জনপ্রশাসনের আধুনিক বা জনকল্যাণকারী দৃষ্টিভঙ্গিঃ


জনপ্রশাসনের এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, বর্তমানে রাষ্ট্রের স্বরূপ জনকল্যাণকারী রাষ্ট্রের স্বরুপে পরিণত হয়েছে। সেই কারণে বর্তমানে রাষ্ট্রের প্রধান কাজই হলো সমস্ত দিক থেকে জনহিতকারী বা জনকল্যাণকারী কার্য করা। এভাবে জনকল্যাণমূলক কাজ করতে গিয়ে রাষ্ট্রের কার্য একদিকে যেমন কার্য বেড়ে গিয়েছে ঠিক একইভাবে জনপ্রশাসনের আলোচনার পরিধিও ক্রমশম বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনকল্যাণকারী সমস্ত বিষয় এখন জনপ্রশাসনের আলোচনার অন্তর্গত। তাই যত দিন যাচ্ছে জনপ্রশাসনের আলোচনায় পরিধিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।


ধন্যবাদ 


** আরও পড়ো👉 : জনপ্রশাসনের বিবর্তন! খুটিনাটি তথ্য সহ

Post a Comment

Previous Post Next Post