Evolution of Public Administration In Bengali || জন প্রশাসনের বিবর্তন
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে তোমরা যারা প্রথমবারের জন্য 'পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা জনপ্রশাসন' বিষয়টি পড়ছো,তোমাদের কাছে শুধুমাত্র পরীক্ষার জন্য নয় সেই সঙ্গে জনপ্রশাসন বিষয়টিকে ভালোভাবে বুঝতে গেলে জনপ্রশাসনের যে বিবর্তন রয়েছে সেটা অতি অবশ্যই বিস্তারিতভাবে জানতে হবে। জনপ্রশাসনের বিবর্তনের বিষয়টি বুঝতে যাতে তোমাদের কোন অসুবিধা না হয় সেই কারণে আমরা আজকের এই ব্লগ পোস্টে ' জনপ্রশাসনের সূত্রপাত এবং একটি শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্পূর্ণ পথ তুলে ধরেছি।
সহজ ভাষায় বিবর্তন বলতে কোনো একটি বিষয়ের সময়ের সঙ্গে তার পরিবর্তন এবং নতুন রূপ গ্রহণকে বোঝায়। সমাজবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মত জনপ্রশাসনের ও এটি সুনির্দিষ্ট বিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
▪ জনপ্রশাসনকে আমরা একটি কার্যক্রম বা অ্যাক্টিভিটি এবং এটি স্বতন্ত্র পাঠ্য বিষয় উভয়ই বলতে পারি। এবার প্রাচীনকাল থেকেই জনপ্রশাসনের বাস্তব প্রয়োগ হলেও এটি স্বতন্ত্র পাঠ্য বিষয় হবে বা শাস্ত্র বিষয়ে হিসেবে জনপ্রশাসনের বয়স খুব একটা বেশি নয়। জনপ্রশাসন বিষয়টি যে বিবর্তন রয়েছে সেই বিবর্তন কালকে আমরা মোট পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করতে পারি।
▪ প্রথম পর্যায়ঃ রাজনীতি প্রশাসন বিভাজন (১৮৮৭-১৯২৬) ;
জনপ্রশাসনে প্রথম পর্যায়টি ছিল মূলত রাজনীতি থেকে জনপ্রশাসনকে আলাদা করে দেখানোর পর্যায়। একটি স্বতন্ত্র পাঠ্য বিষয় হিসেবে জনপ্রশাসনের সূত্রপাত হয়েছিল মূলত ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি উইড্রো উইলসনের একটি লেখার মাধ্যমে। 'Political Science Quarterly' নামক একটি ম্যাগাজিনে উইড্রো উইলসনের একটি লেখা প্রকাশিত হয় যার নাম ছিল 'The Study of Administration'. এই লেখনিতে উইড্রো উইলসন সর্বপ্রথম রাজনীতি থেকে প্রশাসনকে আলাদা করার কথা বলেন এবং প্রশাসন শাস্ত্রটিকে আলাদাভাবে পড়ার ওপর জোড় দেন। তিনি ঐ গ্রন্থে বলেছিলেন যে সংবিধান তৈরি করা সহজ কিন্তু বাস্তব প্রয়োগ করা কঠিন। উইড্রো উইলসনের চিন্তাধারায় বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক Frank J. Goodnow. ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের প্রকাশিত তার ' Politics And Administration' গ্রন্থে তিনিও রাজনীতি এবং প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য দেখান এবং তিনি যুক্তি দেন যে রাজনীতির কাজ হল রাষ্ট্রের ইচ্ছা অনুযায়ী নীতি তৈরি করা এবং প্রশাসনের কাজ হল সেই নীতিগুলির সঠিক বাস্তবায়ন। এরপর ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে L.D. White ' সর্বপ্রথম জনপ্রশাসনের ওপর একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থ লেখেন যার নাম ছিল 'Introduction To The Public Administration'. এই গ্রন্থেও তিনি রাজনীতি এবং প্রশাসনকে আলাদা করে দেখান এবং যুক্তি দেন যে অর্থনীতি এবং দক্ষতাই হলো প্রশাসনের মূল মন্ত্র।
▪ দ্বিতীয় পর্যায়ঃ নীতি নির্ভর প্রশাসনঃ
জনপ্রশাসনের এই পর্যায়টি ১৯২৭ থেকে ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছিল। জনপ্রশাসনের এই পর্যায়ে জনপ্রশাসনকে একটি বিজ্ঞানসম্মত শাস্ত্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। মনে করা হয় জনপ্রসনের এই দ্বিতীয় পর্যায়টি শুরু হয়েছিল W.F. Willoughby এর Principles of Public Administration গ্রন্থটির মাধ্যমে। উইলোবির মতে, জনপ্রশাসনের আলোচনায় কিছু বৈজ্ঞানিক নীতি রয়েছে যেই নীতিগুলোর বাস্তব প্রয়োগ করলে একদিকে যেমন প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব, ঠিক একই ভাবে জনপ্রশাসনকে একটি পৃথক বৈজ্ঞানিক শাস্ত্র হিসেবেও গড়ে তোলা যাবে। এরপর Luther Gulllick এবং Urwick তাদের 'Papers On The Science Of Administration' গ্রন্থে POSDCORB নীতি উল্লেখ করেন। যাতে বলা হয়, এই নীতি বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে একদিকে যেমন প্রশাসনিক দক্ষ বাড়বে তেমত তার উন্নতিও হবে।
▪ POSDCORB : P= Planning, O= Organising, S= Staffing, D= Directing, CO= Co-Ordinating, R= Reporting, B= Budgeting.
▪ তৃতীয় পর্যায়ঃ জনপ্রশাসনের নীতির বিরোধীতার কাল ১৯৩৭-১৯৪৭ : (Era Of Challenge)
জনপ্রশাসনের এই পর্যায়ট গড়ে ওড়ে প্রথম দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রতিক্রিয়া স্বরুপ। এই পর্যায়ে জনপ্রশাসনের নীতিগুলোর বিপরীতে কিছু যুক্তি দেওয়া হয়। প্রথমত F.M. Marx এর সম্পাদনায় প্রকাশিত 'Elememts Of Public Administration' গ্রন্থে বলা হয়, প্রথমে যেভাবে রাজনীতি থেকে প্রশাসনকে আলাদা করার কথা বলা হয় তা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। কারণ রাজনীতি এবং প্রশাসন একে অপরকে প্রভাবিত করবেই। এছাড়াও, জনপ্রশাসন একটি মূল্যমান যুক্ত বিষয় হওয়ায় তারা একে বিজ্ঞান হিসাবে মানতেও অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে হার্বাট সাইমনও তার একটি গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, জনপ্রশাসনের যেসব বৈজ্ঞানিক নীতির কথা বলা হয়, জনপ্রশাসনের সেরকম কোনো সার্বজনিক বৈজ্ঞানিক নীতি থাকতে পারেনা।
▪ চতুর্থ পর্যায়ঃ জনপ্রশাসনের অস্তিত্বের সংকটের কাল ১৯৪৮-১৯৭০ :
যেসব নীতির উপর ভিত্তি করে জনপ্রশাসন দাঁড়িয়েছিল, জনপ্রশাসনের বিবর্তনের তৃতীয় পর্যায়ে সেগুলোকে এমনভাবে সমালোচনা করা হয় যে চতুর্থ পর্যায়ে এসে জনপ্রশাসনের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই অসম্ভব হয়ে পড়ে ফলে। প্রথম পর্যায়ে জনপ্রসাশন সমাজবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা থেকে নিজেকে আলাদা করার প্রচেষ্টা করেছিল কিন্তু চতুর্থ পর্যায়ে স্বতন্ত্র অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়লে জনপ্রশাসন আবার তার মাদার সাইন্স রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কাছে ফিরে আসে।
▪ জনপ্রশাসনের পঞ্চম পর্যায়ঃ
১৯৭০ থেকে বতর্মান পযর্ন্তঃ ১৯৭০ সালে 'National Association Of Schools Of Public Affairs And Administration' (NASPAA) প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এই প্রতিষ্ঠানকে মাধ্যমে জনপ্রশাসন একটি স্বতন্ত্র এবং স্বাধীন পাঠ্য বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তখন থেকেই আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রশাসনকে একটি পাঠ্য বিষয় হিসেবে পড়ানো শুরু হয়। আবার ১৯৭০ দশকে জনপ্রশাসনের আরেকটি নতুন দিক শুরু হয় যা নব জনপ্রশাসন (New Public Administration) নামে পরিচিত। এই নব জনপ্রশাসন মূলত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে থাকে এবং নব জনপ্রশাসনের তাত্ত্বিকদের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং ম্যানেজমেন্ট বা ব্যবস্থাপনা থেকে জনপ্রশাসনকে আলাদা করে একটি স্বতন্ত্র পাঠ্য বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
** আরও পড়ে দেখো : জনপ্রশাসনের অর্থ এবং আলোচনার পরিধি
Post a Comment