কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব (Kautilya's Saptanga Theory)


best-note-on-the-saptanga-theory-of-kautilya-in-bengali

Kautilya's Saptanga Theory In Bengali : ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তা বা ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল থট পেপারের শুরুর দিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীদের কুটুলের রাষ্ট্রদূত পতন এবার কৌটিল্যের রাষ্ট্রতত্ত্বের এক অন্যতম অংশ হলো রাষ্ট্র সম্পর্কিত তাঁর সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব। পরীক্ষায় লেখার জন্য যারা সপ্তাঙ্গ তত্ত্বের উপর সেরা নোট খুজছো,;তাদের জন্যই আজকের এই ব্লগ পোস্ট। নিম্নে কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্বের উপর একটি সহজ সরল নোট দেওয়া হলো।

প্রাচীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রদার্শনিক কৌটিল্য বা চাণক্য রচিত গ্রন্থ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অর্থশাস্ত্র নামক গ্রন্থটি। অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে কৌটিল্য মূলত রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব তাঁর রাষ্ট্রতত্ত্ব্বের অংশ।

কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব কী?

কৌটিল্য বা চাণক্যের মতে মানব শরীরে যেমন পঞ্চম ইন্দ্রিয় থাকে ঠিক সেরকমই একটি রাষ্ট্রের সাতটি অঙ্গ থাকে। রাষ্ট্রের সেই সাতটি অঙ্গ হলো- যথা ; ১) স্বামী বা রাজা ২) অমাত্য বা মন্ত্রীগণ ৩) জনপদ অর্থাৎ রাষ্ট্রের জনগণ এবং রাষ্ট্রের ভূমি ৪) দুর্গ ৫) কোশ অর্থাৎ রাজস্ব ভান্ডার ৬) দন্ড অর্থাৎ রাষ্ট্রের সৈনিক এবং আইন ৭) মিত্র অর্থাৎ বন্ধু রাষ্ট্র। রাষ্ট্র সম্পর্কিত কৌটিল্যের এই মতবাদ সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব নামে পরিচিত।

স্বামী বা রাজা :-

কৌটিল্য মতে রাষ্ট্রের শক্তিশালী উপাদানগুলির মধ্যে প্রথম হচ্ছে স্বামী অর্থাৎ রাজা। স্বামী হলেন রাষ্ট্রের আত্মা। সম্রাট মূলত নিজ রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা,ন্যায় ব্যবস্থা, সৈন্য এবং রাজনীতির প্রধান কেন্দ্র। কৌটিল্যের মতে রাজা বা সম্রাট হবেন পরিশ্রমী, বুদ্ধিমান,জ্ঞানী, সাহসী এবং প্রজাদরদী। এছাড়াও রাজা তার মন্ত্রীদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করবেন এবং রাজা সবসময়ই প্রজাদের কল্যাণের জন্য কার্য করবেন। যদি রাজা নিজে শক্তিশালী হয় তাহলেই রাষ্ট্র শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং রাজার অযোগ্যতাই রাষ্ট্রের ধ্বংসের কারণ।

অমাত্য বা মন্ত্রীগণ :-

কোনো রাজার পক্ষেই একা একা নিজের রাষ্ট্র সঠিকভাবে শাসন করা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা ঠিক রাখতে, ন্যায় ব্যবস্থা সচল রাখতে এবং রাষ্ট্রের প্রজাদের জন্য সঠিক নিয়ম কানুন তৈরি করতে অবশ্যই রাজার বুদ্ধিমান,বিশ্বস্ত.জ্ঞানী সৎ এবং সাহসী মন্ত্রীদের প্রয়োজন হয়। রাষ্ট্রের এরূপ মন্ত্রীরাই রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা সচল রাখতে এবং রাজাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার কাজে আসে। তাই একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের দ্বিতীয় উপাদান হলো সেই রাষ্ট্রের মন্ত্রী বা অমাত্যগন। তাই রাজা নীজ জ্ঞান, বুদ্ধি এবং বিচক্ষণতার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সৎ,জ্ঞানী,বিশ্বস্ত এবং বুদ্ধিমান মন্ত্রী নিয়োগ করবেন।

জনপদ (জনগণ এবং রাষ্ট্রের ভূমি) :-

কৌটিল্য শক্তিশালী রাষ্ট্রের তৃতীয় উপাদান হিসেবে জনপদের উল্লেখ করেছেন। জনপদ বলতে তিনি রাষ্ট্রের আয়তন এবং রাষ্ট্রের প্রজাকে বুঝিয়েছেন। রাষ্ট্রের জনপদ যত বেশি ভালো হবে সেই রাষ্ট্রে ততো ভালো কৃষিন ব্যবসা-বাণিজ্য হবে এবং এর ফলে রাষ্ট্রের অর্থব্যবস্থাও শক্তিশালী হবে। এবং যেই রাষ্ট্রের অর্থব্যবস্থা যত ভালো সেই রাজ্যের প্রজা ততো সুখী। চাণক্য বলেছেন, প্রজার সুখেই রাজার সুখ, প্রজার হিতেই রাজার হিত। যা রাজার প্রিয়, তা তাঁর হিত নয়, কিন্তু প্রজার যা কিছু প্রিয় তাই রাজার হিত। (“প্রজা সুখে সুখং রাজ্ঞঃ প্রজানাং চ হিতে হিতম্। নাত্মপ্রিয়ং হিতং রাজ্ঞঃ প্রজানাং তু প্রিয়ং হিতম্” ॥)।

রাষ্ট্রের দুর্গ :-

একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার প্রধান কেন্দ্র হলো সেই রাষ্ট্রের দুর্গ। দুর্গ থেকেই সম্রাট নিজস্ব শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করেন। শুধুমাত্র সঠিকভাবে রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা নয়, সাথে শত্রুর আক্রমণ থেকে রাষ্ট্রকে রক্ষা করতেও সঠিক দুর্গের প্রয়োজন। একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের জন্য কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্র নামক গ্রন্থে চার প্রকার দুর্গ কথা বলেছেন। যথা- ১) জল দুর্গ-যেটা নদী, নালা, সমুদ্র বা এই ধরনের জল দ্বারা ঘেরা থাকে। ২) দ্বিতীয়ত গিরি দুর্গ অর্থাৎ যেটা পাহারে অবস্থিত বা পাহাড়-পর্ব দ্বারা ঘেরা ; ৩) তৃতীয়ত বন দুর্গ অর্থাৎ যেটা বন দ্বারা আবৃত বা বনের মধ্যে অবস্থিত। এছাড়াও তিনি মরু দুর্গের কথা বলেছেন।

কোষ (রাষ্ট্রীয় অর্থভাণ্ডার) :-

শক্তিশালী রাষ্ট্রের পঞ্চম উপাদান হিসেবে কৌটিল্য কোষ অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় অর্থভাণ্ডার বা গুপ্তধনের কথা বলেছেন। একটি রাষ্ট্র কতটা শক্তিশালী সেটা নির্ভর করে সেই রাষ্ট্রের মজুদ অর্থ ভান্ডারের ওপর। সেই কারণে কৌটিল্য জনপদের কৃষিকর,বাণিজ্য কর সংগ্রহ করার পাশাপাশি সম্রাটের নিজের মিতব্যয়িতা নিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্রের বাণিজ্য ব্যবস্থা এবং কৃষির বিকাশের মাধ্যমে শক্তিশালী কোষ বা অর্থভাণ্ডার গড়ে তোলার কথা বলেছেন।

দন্ড অর্থাৎ রাষ্ট্রের সৈনিক এবং আইন :-

রাষ্ট্রের ষষ্ঠ উপাদান হিসেবে কটি লোক দন্ড অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় শক্তিশালী সেনা এবং আইন ব্যবস্থা কথা বলেছেন। কৌটিল্যের মতে ক্ষতি ওরাই হবেন রাষ্ট্রীয় সৈনিক যারা বহির আক্রমণ থেকে রাষ্ট্রকে রক্ষা করবেন। অপরদিকে রাষ্ট্রীয় আইন ব্যবস্থা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখবে।

মিত্র অর্থাৎ বন্ধু রাষ্ট্র :-

যেকোনো রাষ্ট্রের পক্ষে একা শক্তিশালী হয়ে ওঠা সবসময় সম্ভব হয় না। সেই কারণে শক্তিশালী রাষ্ট্র হয়ে উঠতে সেই রাষ্ট্রের রাজার প্রয়োজন মিত্র রাষ্ট্র তৈরি করা। মিত্র রাষ্ট্র থাকলে একদিকে যেমন তার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি করে আর্থিক ব্যবস্থা মজবুত করা যায় ঠিক একইভাবে যুদ্ধের সময় বা আপাতকালীন সময় সামরিক সাহায্যও লাভ করা যায়। তবে কৌটিল্য এটাও বলেন যে রাজনীতিতে কখনোই কোনো রাষ্ট্র স্থায়ী শত্রু বা স্থায়ী মিত্র হয় না। এছাড়াও রাজনীতিতে সবসময়ই নিজের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র হলো সম্ভাব্য শত্রু এবং শত্রু রাষ্ট্রের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র হলো সম্ভাব্য মিত্র।

Post a Comment

Previous Post Next Post