🔥বিশ্বায়নের উপর সেরা নোট! বিশ্বায়নের অর্থ ; বৈশিষ্ট্য এবং প্রভাব সমূহ🔥

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে যখনই তোমরা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বা ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন পেপারটা পড়বে, তখন সেখানে তোমাদের বিশ্বায়ন কী বা বিশ্বায়ন বলতে কী বোঝায়, বিশ্বায়নের বৈশিষ্ট্য কী এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রভাব কী (Globalization: Meaning, Features & Impact on International Relations) এইসব পড়তে হবে। সেই কারণে আমরা তোমাদের জন্য আজকের এই ব্লগপোস্টে বিশ্বায়নের উপর একটি সহজ সরল নোট শেয়ার করলাম।

---

▪ বিশ্বায়ন শব্দের অর্থ || Meaning Of Globalization

ইংরেজি গ্লোবালাইজেশন শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে বিশ্বায়ন বা ভুবণীকরণ। এবার বিশ্বায়ন শব্দটিকে এতো বেশি বিভিন্ন অর্থে বিভিন্ন প্রসঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে যে বিশ্বায়ম শব্দটির কোনো সর্বজনীন গ্রাহ্য সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব হয়নি। 

জোসেফ স্টিগলিৎস এর মতে বিশ্বায়ন হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জনগণের মধ্যে এমন এক ঘনিষ্ঠতর সংহতি সাধন যা পরিবহন এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে ব্যয় হ্রাস করেছে। এবং দ্রব্যসামগ্রী, জ্ঞান, পুজি এমনকি মানুষের বিশ্বব্যাপী অবাধ যাতায়াতের ওপর আরোপিত সমস্ত কৃত্রিম প্রতিবন্ধকতা কেও ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।। 

যাইহোক সহজ ভাষায় বিশ্বায়ন বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয় যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ঘটে,বিশ্ব বাণিজ্যের বিস্তার হয় এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেশীয় বাজার এবং আন্তর্জাতিক বা বিশ্ববাজারের মধ্যে কোনো বেড়াজাল থাকে না। সহজ ভাষায় বিশ্বায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে সমগ্র বিশ্বটাকেই একটি মুক্ত বাণিজ্য বাজার হিসেবে ধরা হয়।

বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার প্রবক্তাদের মতে যেই দেশে যেই জিনিসটা ভালো উৎপাদিত হয়, সেই দেশ তার উৎপাদিত পণ্য বিদেশি বাজারে রপ্তানি করে বিদেশী মুদ্রা অর্জন করবে। এরপর সেই মুদ্রা দিয়ে দেশের জন্য সেই জিনিসটা আমদানি করতে হবে যেটা সেই দেশ উৎপাদন করতে পারে না। এইভাবে প্রতিটা দেশই নিজের প্রয়োজন মেটাবে এবং এই তত্ত্ব অনুযায়ী পৃথিবীর কোনো দেশকেই স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার প্রয়োজন নেই কারণ গোটা পৃথিবীটাই পরস্পর পরস্পরের উপর নির্ভরশীল।

বিশ্বায়নের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনাঃ- 

বিশ্বায়নের কতগুলি অপরিহার্যভাবে ও মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন -

▪ মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রতিষ্ঠাঃ- 

বিশ্বায়নের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো,বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনো বেড়াজাল বা বাঁধা নিয়ন্ত্রণ থাকতে দেয় না। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় সমগ্র বিশ্বকে একটি মুক্ত বাজার হিসেবে ধরা হয়। এটি এমন একটি মুক্তবাজার বা মুক্ত অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চায় যেখানে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। বিশ্বায়ন সারা বিশ্বের বাজারকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত রাখতে চায় যেখানে উন্নত দেশগুলি ও বহুজাতিক সংস্থা গুলি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হয়ে নিজেদের পুঁজি বিনিয়োগ করার মাধ্যমে শিল্প বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে পারবে।।

▪ পুঁজি ও প্রযুক্তির অবাধ চলাচলঃ- 

বিশ্বায়নের আরেক বৈশিষ্ট্য হল আধুনিক বিশ্বের পুঁজি ও প্রযুক্তির অবাধ চলাচল। বিশ্বায়নের যুগে পুঁজির বিনিয়োগের ধারা নাটকীয় ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। এই ধারায় উদ্যোক্তা সহ বহুজাতিক সংস্থা গুলিও বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রবেশ, লোকাল মার্কেটের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে সেখানে অবাধ ভাবে পুঁজির বিনিয়োগ করছে। ফলে রাষ্ট্রের পুঁজি আর নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকছে না বরং তার নিজস্ব সীমারেখা ছাড়িয়ে বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে।

▪ পারস্পরিক নির্ভরশীলতাঃ- 

বিশ্বায়ন সচেতনভাবে সমগ্র বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার পরিবেশ গড়ে তোলার পক্ষপাতী। বিশ্বায়নের মাধ্যমে যেসমস্ত দেশ বা রাষ্ট্র যেই জিনিসপত্র উৎপাদন করতে সক্ষম নয় সেগুলো বিশ্বায়নের মাধ্যমে অবাধ আদান-প্রদানের মাধ্যমে তারা পেতে পারে। ঠিক একই ভাবে তাদের উৎপাদিত জিনিসপত্রগুলিও বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্যান্য দেশে রপ্তানি করতে পারে।। এভাবে একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে অপর একটি রাষ্ট্রের বা সংস্থার পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।।

▪ দক্ষতার ক্ষেত্রে বিপ্লবঃ 

বর্তমানে বিভিন্ন দেশের মধ্যে তথ্য প্রযুক্তির আদান-প্রদানের মধ্যে কোনোবাধা নিষেধ আর নেই। বিশ্নায়নের যুগে বিভিন্ন দেশে এক সেবামূলক অর্থনীতি গড়ে উঠেছে। এই সেবামূলক অর্থনীতির ক্ষেত্রে আমরা আউটসোর্সিং এর কথা বলতে পারি। বর্তমান বিশ্বের যেকেউ ইন্টারনেট পরিষেবা, কম্পিউটারকে ব্যবহার করে আউটসোর্সিং এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে এবং নিজের মেধা এবং দক্ষতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে উপার্জন করতে পারে।

▪ রাষ্ট্রের সাবেকি সার্বভৌমত্বের পরিবর্তনঃ- 

বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া হল জাতি রাষ্ট্র ধারণার সম্পূর্ণ বিরোধী। জাতি রাষ্ট্র হল, কোনো দেশ নিজেদের শ্রম এবং জনসাধারণের কল্যাণের জন্য পুঁজির অবাধ মুনাফা ও লুন্ঠনের ওপর বিভিন্ন বাধানিষেধ আরোপ করে। কিন্তু বিশ্বায়ন সেই বাধা নিষেধকে মুক্ত করতে চায়।। তাই সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব অনেকটাই রাস পায়।

▪ ভৌগলিক ও রাজনৈতিক সীমানার অস্বীকারঃ বিশ্বায়নের প্রবক্তকরা এবং সমর্থকরা অনিয়ন্ত্রিত, অবাদ মুক্তবাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য বা অর্থনৈতিক সুসংগতির জন্য দেশের ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিক সীমানার অবসান ঘটনার কথা বলেন। বৃহৎ পুঁজির নিয়ন্ত্রকরা পুঁজির অবাধ চলাচল এবং বিনিয়োগের বাজার তৈরির জন্যই এরূপ কথা বলেন। এর প্রবক্তাদের মতে সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্লোবাল চরিত্র অর্জন করতে হবে তবেই প্রতিটি দেশের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বাড়বে। 

▪ বাণিজ্য,শিল্প ও সংস্কৃতির প্রসারঃ- 

বিশ্বায়ন কথার মূল অর্থই হলো বাণিজ্য, শিল্প এবং সংস্কৃতির প্রসার। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উন্নত দেশগুলি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উন্নয়নশীল বা উন্নয়নকামী দেশগুলিতে নিজেদের পুঁজি বিনিয়োগ করার মাধ্যমে বাণিজ্য,শিল্প এবং সংস্কৃতির প্রসার ঘটায়। 

▪ বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সংহতি সাধনঃ-

বিশ্বায়নের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে জোসেফ স্টিগলিৎস বলেছেন, বিশ্বায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং জনগণের মধ্যে ঘনিষ্ঠতর সংগতি সাধন করে।। বিশ্বায়ন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে নিবিড় সংহতি গড়ে তুলতে চায়। বর্তমানে কোনো রাষ্ট্রের পক্ষেই একাকী বিচ্ছিন্নভাবে টিকে থাকা সম্ভব নয়। বিশ্বায়ন এই বাস্তবতাকে তুলে ধরে রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি অভিন্ন যোগসূত্র গড়ে তুলতে চায়।।

▪ রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতার উপর প্রভাবঃ 

উন্নয়নশীল দেশগুলি বহুজাতিক সংস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ করার পূর্বেই বহুজাতিক সংস্থা গুলি সেই দেশ গুলিকে এমন কিছু শর্ত প্রদান করে যার মাধ্যমে সেই দেশ গুলোকে নিজের কাঠামোগত পরিবর্তন করতে হয়। যেমন সংস্থাগুলির জন্য দেশের বাজার উন্মুক্ত করা,তাদের অর্থনীতিতে বাজারে বহুজাতিক সংস্থা গুলির পুঁজির অবাধ যাতায়াতের পথ মসৃণ করা এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকার হস্তক্ষেপ বন্ধ করা ইত্যাদি।। ফলে বলা যায় বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া কিন্তু রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমিকতাকে অনেকটাই প্রভাবিত এবং সংকুচিত করেছে

▪ উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাবঃ- 

বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার একটি খারাপ দিক হল এটি অনুন্নত বা উন্নতশীল দেশগুলির ক্ষেত্রে খারাপ প্রভাব বিস্তার করে। কারণ উন্নত দেশগুলি বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশে নিজেদের বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলির নিজস্ব অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও বহুজাতিক সংস্থা গুলির বিভিন্ন ধরনের চাপে পড়ে উন্নয়নশীল দেশগুলি নিজেদের কাঠামোগত পরিবর্তন করার ফলে, সেই দেশের বেকারত্ব, শ্রমিক ছাটাই, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের অসক্রিয়তা দেখা দেওয়ার ফলে দেশে দারিদ্র্য, মূল্যবৃদ্ধি পায়। ফলে আর্থিক এবং সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সংকট দেখা দেয়।।

---

বিশ্বায়নের ফলাফল / প্রভাব গুলি সম্পর্কে আলোচনা করো। 

ভূমিকাঃ বিশ্বায়নের প্রবক্রারা বিশ্বায়নকে সংহতি ও সংযুক্তি সাধনের এক স্বাভাবিক ও মহান প্রক্রিয়া হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু বাস্তবে বিশ্বায়নের ফলে মূলত উন্নত দেশগুলি আরো উন্নত হয়েছে। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া মূলত বাণিজ্যে-শিল্পের ক্ষেত্রে উন্নত রাষ্ট্র এবং বহুজাতিক সংস্থা গুলির নয়া সাম্রাজ্যবাদী নীতি। কিন্তু অপরদিকে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই ফলাফল গুলিকে মূলত চার ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- 

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের ফলাফলঃ- 

বিশ্বায়নের যুগে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার বা ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড,ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন এর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বায়নের প্রবক্তারা বিশ্বব্যাপী লগ্নিপুঁজি সম্প্রসারণের মাধ্যমে তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলিকে অর্থনৈতিক দিক থেকে শোষণ করার চেষ্টা করে। ঋণগ্রহণকারী অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলি বহুজাতিক সংস্থা গুলির কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করার পূর্বেই সেই সংস্থাগুলো সেই উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এমন কিছু শর্ত প্রদান যার মাধ্যমে সেই দেশগুলি নিজেদের কাঠামোগত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।।

 

এছাড়াও উন্নত দেশগুলি বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশে নিজেদের বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলির নিজস্ব অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও বহুজাতিক সংস্থা গুলির বিভিন্ন ধরনের চাপে পড়ে উন্নয়নশীল দেশগুলি নিজেদের কাঠামোগত পরিবর্তন করার ফলে, সেই দেশের বেকারত্ব, শ্রমিক ছাটাই, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের অসক্রিয়তা দেখা দেওয়ার ফলে দেশে দারিদ্র্য, মূল্যবৃদ্ধি পায়। ফলে আর্থিক এবং সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সংকট দেখা দেয়।। 

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রভাবঃ- 

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের মতো রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বিশ্বায়ন জাতিরাষ্ট্রের দিক থেকে অনুন্নত দেশগুলির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রতিটি রাষ্ট্রের নিজের শ্রম এবং জনসাধারণের কল্যাণের কথা ভেবে পুঁজির অবাধ মুনাফা লুণ্ঠনের উপর বিভিন্ন বাধানিষেধ আরোপ করে। কিন্তু বিশ্বায়ন জাতিরাষ্ট্রকে অকেজো করে তোলার পক্ষপাতী। বিশ্বায়ন এমন এক উন্মুক্ত বিশ্ববাণিজ্য বাজার গড়ে তোলার পক্ষপাতী যেখানে রাষ্ট্রের সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। তাই এক্ষেত্রে বিশ্বায়ন বিভিন্ন রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতাকে অনেক ক্ষেত্রেই কমিয়ে দেয়।।

পরিবেশের ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের কূপ্রভাবঃ- 

বিশ্বায়নের সবচাইতে খারাপ দিকটি হলো বিশ্বায়নের মাধ্যমে উন্নত দেশগুলি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে সেই সমস্ত শিল্প ও বাণিজ্য গড়ে তোলে, যেগুলো তারা নিজেদের দেশে স্থাপন করলে ক্ষতি হতে পারে। এর মাধ্যমে উন্নত দেশগুলি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে পরিবেশ দূষণকারী শিল্প গড়ে তোলে যেগুলো তাদের নিজেদের পক্ষে ক্ষতিকর।

এসব শিল্পের মধ্যে জৈব রসায়ন শিল্পের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া কলকারখানার উৎপাদনের বর্জ্য ফেলে দেওয়ার ফলে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক পরিমাণে পরিবেশ দূষিত হয়। উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলোতে পরিবেশ রক্ষা আইন যথেষ্ট কঠোরভাবে মেনে চলা হয় বলে বহুজাতিক সংস্থাগুলি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে পরিবেশ দূষণকারী শিল্প গড়ে তোলার কাজ করে থাকে।।

সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের কূপ্রভাবঃ- 

বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের, বিশেষত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির নিজস্ব সংস্কৃতি বিপন্ন হয়ে পড়েছে। উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির পরিকাঠামো ও গণমাধ্যমের ওপর বহুজাতিক সংস্থাগুলির একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে পশ্চিমি ভোগবাদী সংস্কৃতি আজ ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রসার লাভ করতে পেরেছে। এর ফলে বাড়ি, গাড়ি, জমি, টিভি, ফ্রিজ, এয়ার কুলার প্রভৃতি পণ্যের চাহিদা একদিকে যেমন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে তেমনি টিভি ও সিনেমার দৌলতে যৌনতা ও মাফিয়াতন্ত্রের পাশাপাশি হিংস্রতাকেও মানবসমাজের স্বাভাবিক অঙ্গ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।

তা ছাড়া, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ফ্যাশন শো-র প্রদর্শনী, বিজ্ঞাপনে নারীর খোলামেলা শরীর প্রদর্শন প্রভৃতির মাধ্যমে বিকৃত সংস্কৃতিকে প্রকৃত সংস্কৃতি হিসেবে তুলে ধরার অন্তহীন প্রয়াস লক্ষ করা যায়। শিশু ও কিশোরকিশোরীদের মনে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তারা সুস্থ জীবন থেকে বিচ্যুত হয়ে বিপথগামী হতে থাকে। বলা বাহুল্য, পাশ্চাত্যের এই সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের আসল লক্ষ্য হল মানুষের সমাজমনস্কতা ও বিপ্লবী চেতনাকে ধ্বংস করে দেওয়া।

উপসংহারঃ-

 লগ্নি পুঁজির বিশ্বজয়ের অভিযানের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ যাবে। কিন্তু ডেভিড হেল্ড শুরু হয়েছে। বিশ্বব্যাংক, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের কর্মকর্তারা যেখানেই নীতি নির্ধারণের জন্য সমবেত হয়েছেন, সেখানেই বিশ্বায়ন, উদারীকরণ ও বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে হাজার হাজার প্রতিবাদী মানুষ বিক্ষোভে শামিল হয়েছে। সুতরাং বলা যেতে পারে, সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নই যে শেষ কথা নয়, আগামীদিনের সার্বভৌমিকতা ছাড়া রাষ্ট্রের ইতিহাসই তার প্রমাণ দেবে।

---